Islamic news bangla লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
Islamic news bangla লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

পাকিস্তানকে আরো ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিলো চীন

পাকিস্তানকে আরো ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিলো চীন 


পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী হলেন ইসাক দার । তিনি শুক্রবার এ বিষয়ে একটি টুইট বার্তা পাঠান।

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে অর্থনৈতিক সংকটে টালমাটাল পাকিস্তানকে আরও ৫০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে চীন। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসাক দার শুক্রবার এক টুইটবার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন। টুইটবার্তায় ইসাক দার জানান, পাকিস্তানের ঋণ সহায়তার জন্য আবেদন করার পর সম্প্রতি পাকিস্তানের জন্য ১৩০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়ালি ব্যাংক লিমিটেড (আইসিবিসি)। তিন কিস্তিতে দেওয়া হবে এই ঋণের অর্থ; তারই প্রথম কিস্তি এসেছে শুক্রবার। এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানকে ৭০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছিল চীনের রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান চায়না ডেভেলেপমেন্ট ব্যাংক। টুইটবার্তায় ইসাক দার জানিয়েছেন, তিন কিস্তিতে এই সহায়তা প্রদান করবে আইসিবিসি। তার মধ্যে প্রথম কিস্তি ইতোমধ্যে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এসে পৌঁছেছে। দশকের পর দশক ধরে দেশের ক্ষমতাকাঠামোতে সামরিক বাহিনীর প্রাধান্য, দুর্নীতি, অপচয়-অপব্যায়ের জেরে ভয়াবহ রিজার্ভ সংকটে পড়েছে পাকিস্তান। কোনো দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ৩ মাসের আমদানি ব্যায়ের সমপরিমাণ ডলারের মজুত থাকতে হয়, কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যে পরিমাণ ডলারের মজুত আছে, তা দিয়ে বড়জোর দু’সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ৩ ফেব্রুয়ারি দেওয়া হিসাব অনুসারে, চলতি ২০২৩ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ১৭ কোটি ডলার কমে গেছে। এখন এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯০ কোটি ডলার। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ সহায়তা চায়। এ নিয়ে কথাবার্তাও শুরু হয়েছিল। তবে বর্তমানে সেই আলোচনা ‘ঝুলে যাওয়ায়’ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ অর্থের ছাড় এখনো হয়নি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রাধিকার পরিবর্তন করেছে আইএমএফ। ফলে, দু’পক্ষের ঐকমত্য আবারও পিছিয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে পাকিস্তান ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। পাকিস্তানি রুপির দাম পড়তে পড়তে এখন ডলারপ্রতি ২৬৫ রুপিতে পৌঁছেছে । বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে। ১৯৯৮ সালের পর থেকে এখন সর্বনিম্ন স্তরে নেমে এসেছে রিজার্ভ। রিজার্ভ নেমে যাওয়ায় পাকিস্তানে এখন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে খাদ্য-জ্বালানি-বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। আটা, ডাল, চাল, দুধÑ সবকিছুরই দাম এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ফলে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে আছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

রোজা সম্পর্কিত আধুনিক সমস্যার সমাধান দেখে নিন

রোজা সম্পর্কিত আধুনিক সমস্যার সমাধান দেখে নিন


রোজা সম্পর্কিত আধুনিক সমস্যার সমাধান

যুগে যুগে ইসলামের অন্য সব বিধানের মতো রোজা বিষয়েও নতুন জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান আবিষ্কারের কারণে সৃষ্ট এসব নতুন সমস্যার সমাধানও দিয়েছেন বিজ্ঞ আলিম ও ফকিহগণ। এখানে রোজাবিষয়ক কিছু আধুনিক মাসায়েল আলোচনা করা হলো:



বিদেশভ্রমণ



রমজানে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণের কারণে কোনো ব্যক্তির রোজা যদি ২৭ বা ২৮টি হয়ে যায়, অর্থাৎ ২৭-২৮টি রোজা রাখার পর সেই দেশে ঈদের চাঁদ উদিত হয়ে যায়, তাহলে তার কর্তব্য হলো ওই দেশের রোজাদারদের মতো রোজা ছেড়ে দেওয়া এবং সবার সঙ্গে ঈদ করা। অবশ্য, পরে সেই রোজাগুলোর কাজা আদায় করতে হবে। একইভাবে রোজা বেশি হয়ে গেলেও একই বিধান। রোজাদারদের সম্মানে সেও রোজা রেখে দেবে এবং ওই দেশের লোকদের সঙ্গে ঈদ করবে। (ফতোয়ায়ে রাহিমিয়া)। বিমানযাত্রার কারণে দিন বড় বা ছোট হয়ে গেলেও একই বিধান। অর্থাৎ, অবস্থানস্থলে ইফতারের সময় হলে ইফতার করতে হবে। 



ইনহেলার ব্যবহার


রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যায়। তাই সাহরির শেষ সময় ও ইফতারের প্রথমে ইনহেলার ব্যবহার করলে যদি তেমন অসুবিধা না হয়, তবে রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরি; কিন্তু অসুস্থতা বেশি হওয়ার কারণে যদি দিনের বেলায় ব্যবহার করা জরুরি হয়, তাহলে তখন ব্যবহার করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে তিনটি করণীয় রয়েছে। এক. এই অজুহাতে দিনের বেলায় ইনহেলার ব্যবহার করলেও অন্যান্য পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। দুই. পরে রোগ ভালো হলে রোজাটির কাজা করে নিতে হবে। তিন. অপারগতা যদি আজীবন থাকে, তাহলে ফিদয়া আদায় করতে হবে। (রদ্দুল মুখতার) 



ইনজেকশন পুশ করা


ইনজেকশন, ইনস্যুলিন ও স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙবে না। তবে গ্লুকোজ-জাতীয় ইনজেকশন, অর্থাৎ যেসব স্যালাইন ও ইনজেকশন খাদ্যের কাজ দেয়, রোজা অবস্থায় মারাত্মক অসুস্থতা ছাড়া নেওয়া যাবে না। (আলাতে জাদিদা কি শরয়ি আহকাম) 


রক্ত দেওয়া-নেওয়া



রোজা অবস্থায় রক্ত দেওয়া-নেওয়া দুটিই জায়েজ। এর কারণে রোজা ভাঙবে না। তাই ডায়ালাইসিসের কারণে রোজা ভাঙবে না। তবে রক্ত দেওয়ার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলে রোজা অবস্থায় রক্তদান মাকরুহ। (ফিকহুল নাওয়াজিল) 


এনজিওগ্রাম ও অ্যান্ডোসকপি



হার্ট ব্লক হয়ে গেলে ঊরুর গোড়া দিয়ে কেটে বিশেষ রগের ভেতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত যে যন্ত্র ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয়, তার নাম এনজিওগ্রাম। এই যন্ত্রে যদি কোনো ধরনের ওষুধ লাগানো থাকে, তার পরেও রোজা ভাঙবে না। আর চিকন পাইপ, যার মাথায় বাল্ব-জাতীয় একটি বস্তু থাকে। পাইপটি পাকস্থলীতে ঢোকানো হয় এবং বাইরে থাকা মনিটরের মাধ্যমে রোগীর পেটের অবস্থা নির্ণয় করা হয়। এই নলে যদি কোনো ওষুধ ব্যবহার করা হয় বা পাইপের ভেতর দিয়ে পানি বা ওষুধ ছিটানো হয়ে থাকে, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। অন্যথায় রোজা ভাঙবে না। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল) 


দাঁত তোলা


রোজা অবস্থায় একান্ত প্রয়োজন হলে দাঁত তোলা জায়েজ আছে। তবে একান্ত প্রয়োজন না হলে এমনটা করা মাকরুহ। ওষুধ যদি গলায় চলে যায় অথবা থুতু থেকে বেশি অথবা সমপরিমাণ রক্ত যদি গলায় যায় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (আহসানুল ফাতওয়া) 


পেস্ট ও টুথ পাউডার ব্যবহার



রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় টুথ পাউডার, পেস্ট, মাজন ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরুহ। তবে গলায় পৌঁছালে রোজা ভেঙে যাবে। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল) 


অক্সিজেন


রোজা অবস্থায় ওষুধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোজা ভাঙবে না। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল) 


মাথায় অপারেশন


রোজা অবস্থায় মাথায় অপারেশন করে ওষুধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক, রোজা ভাঙবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহিয়া) 


লেপারোসকপি


শিকজাতীয় যন্ত্র দ্বারা পেট ছিদ্র করে পেটের ভেতরের কোনো অংশ বা মাংস ইত্যাদি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বের করে নিয়ে আসার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র। এতে যদি ওষুধ লাগানো থাকে, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে, অন্যথায় রোজা ভাঙবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহিয়া) 


প্রক্টোসকপি


পাইলস, অর্শ ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোসকপি বলে। মলদ্বার দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। রোগী যাতে ব্যথা না পায়, সে জন্য নলের মধ্যে গ্লিসারিন জাতীয় কোনো পিচ্ছিল বস্তু ব্যবহার করা হয়। নলটি পুরোপুরি ভেতরে প্রবেশ করে না। চিকিৎসকদের মতানুসারে, ওই পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সঙ্গে মিশে থাকে এবং নলের সঙ্গেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না। থাকলেও তা পরে বেরিয়ে আসে। তবে ওই বস্তু ভেজা হওয়ার কারণে রোজা ভেঙে যাবে। (ফাতওয়া শামি) 


চোখে ওষুধ ব্যবহার


চোখে ড্রপ, ওষুধ, সুরমা বা মলম ইত্যাদি ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় উপলব্ধি হয়। কারণ চোখে ওষুধ ইত্যাদি দিলে রোজা না ভাঙার বিষয়টি হাদিস ও ফিকাহশাস্ত্রের মূলনীতি দ্বারা প্রমাণিত। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল) 


নাইট্রোগ্লিসারিন


অ্যারোসল-জাতীয় ওষুধটি হার্টের রোগীরা ব্যবহার করেন। ডাক্তারের মতে, ওষুধটি জিহ্বার নিচে দুই-তিন ফোঁটা দেওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে শিরার মাধ্যমে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। এ হিসাবে এই ওষুধ ব্যবহার করার পর গলায় ওষুধ না

 গেলে বা এর স্বাদ না পৌঁছালে রোজা ভাঙবে না (ফিকহুল নাওয়াজিল)


দেখেন দিল্লিতে ‘৬০০ বছরের প্রাচীন মসজিদ’ যে কারণে ভেঙ্গে দিল কর্তৃপক্ষ

দিল্লিতে ‘৬০০ বছরের প্রাচীন মসজিদ’ যে কারণে ভেঙ্গে দিল কর্তৃপক্ষ


মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলার পরে সেখানে এখন শুধুই ধ্বংসস্তুপ


ফাওয়াদের প্রিয় রঙ সবুজ।


বারো বছরের এই কিশোরের তাই চারদিকের সবুজ ঘাস, গাছ-গাছালি খুব প্রিয় ছিল। ফাওয়াদ ভারতের রাজধানী দিল্লির যে মাদ্রাসায় থাকত, সেখানে যে চারপাশে অনেক গাছ।


বছর দুয়েক আগে হঠাৎ করেই বাবা আর মা মারা যাওয়ার পরে পড়শি রাজ্য থেকে দিল্লির যে মাদ্রাসায় থাকতে এসেছিল ফাওয়াদ, জায়গাটা সেকারণেই ভাল লেগে গিয়েছিল, নিরাপদ মনে হয়েছিল জায়গাটা।


পাশের মসজিদেও ছিল সবুজ রঙের ছড়াছড়ি – ছাদের কড়িকাঠ, খিলান – সেসবও ছিল সবুজ রঙের।

ছিল।

এখন আর নেই।


কারণ ফাওয়াদদের মাদ্রাসাসহ প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো আখুন্দজি মসজিদটাই সপ্তাহ দুয়েক আগে বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা ডিডিএ।


দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা ডিডিএ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন একটি সংস্থা। তারা বলছে ওই মসজিদটি অবৈধভাবে বনাঞ্চল দখল করে ছিল।

বাইরে গাছপালা আর মসজিদের ভেতরের রঙ - সবই ছিল ফাওয়াদের প্রিয় সবুজ রঙের - ফাইল ছবি


প্রাচীন ওই মসজিদ, একটি মাদ্রাসা যেখানে ফাওয়াদ এবং আরও ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকত, যাদের বেশিরভাগই এতিম। মসজিদ পরিসরেই অবস্থিত এক সুফি সাধকের মাজারও ভেঙে দেওয়া হয় ৩০শে জানুয়ারি।


মধ্যযুগীয় এলাকা মেহরৌলি


দিল্লিতে যে সাতটি মধ্যযুগীয় এলাকা রয়েছে, মেহরৌলি তারই অন্যতম। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা প্রাচীন সৌধ আর স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। বিখ্যাত কুতুব মিনারও এই মেহরৌলি অঞ্চলেই। আবার সেখানেই ৭৮৪ একর জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বনাঞ্চল ‘সঞ্জয় বন’।


ডিডিএ এক বিবৃতিতে বলেছে যে মসজিদটি একটি "অবৈধ কাঠামো" ছিল, যা "বিনা বাধায়, কোনও সমস্যা ছাড়াই” ভেঙে দেওয়া হয়েছে।


তবে মসজিদের ইমাম জাকির হুসেন এবং তাদের আইনজীবী শামস খাজা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন যে সম্পত্তিটি দিল্লি ওয়াকফ বোর্ডের অধীন। ওই ওয়াকফ বোর্ডই শহরে ইসলামিক সম্পত্তিগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করে।


মি. হুসেন দাবি করেছেন যে কাঠামোটি ভেঙে ফেলার আগে তাদের লিখিত নোটিশ দেয়নি ডিডিএ। তিনি আরও অভিযোগ যে কয়েকটি কুরআনও নষ্ট হয়েছে, শিশুদের জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে দেওয়া হয় নি। আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, যেসব নথি ছিল মসজিদে, যা দিয়ে প্রমাণ করা যেত যে মসজিদটি অবৈধ ভাবে দখল করা জমিতে অবস্থিত ছিল না, সেসবও বেআইনি ভাবে নিয়ে নেওয়া হয়েছে তাদের কাছ থেকে।


"আমাদের শীতের মধ্যে বার করে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রার্থনা করা ছাড়া কিছুই করতে পারছি না আমরা,” বলছিলেন মি. হুসেন।

কর্তৃপক্ষ বলছে মসজিদটি তাদের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমিতে অবস্থিত ছিল


বনাঞ্চলে জবরদখল?

ডিডিএ অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে যে মসজিদটি যে জমিতে দাঁড়িয়ে ছিল সেটা তাদের এলাকা।


ডিডিএ-র উদ্যান বিভাগের প্রধান কমিশনার রাজীব কুমার তিওয়ারি বিবিসিকে বলেন, "আমরা ঘটনাস্থল সাফ করার সময় কিছু বই পেয়েছি এবং আমরা মসজিদ কর্তৃপক্ষকে সেগুলো আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যেতে বলেছি।“


মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলার পর থেকে কর্তৃপক্ষ মেহরৌলির আরও কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে, যার মধ্যে দিল্লির প্রথম সুফি সাধকদের একজনের মাজারও রয়েছে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।


সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ এবং ইতিহাসবিদরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ এ ঘটনায়।


তারা বলছেন, শত শত বছরের পুরনো স্থাপনাগুলিকে কী ভাবে অবৈধ তকমা দেওয়া যায়?


তাদের আরও অভিযোগ যে পরিকল্পিত ও অন্যায়ভাবে মুসলিম সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলিকেই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে।


তবে ডিডিএ জানাচ্ছে, ‘সঞ্জয় বন’-এ যে ২০টি ধর্মীয় কাঠামো সরিয়ে দেওয়া হবে, তার মধ্যে ১৬টি মাজার এবং চারটি মন্দির রয়েছে।


"স্পষ্টতই একটি প্যাটার্ন উঠে আসছে এবং এটি দেশের জন্য বিপজ্জনক নজির স্থাপন করছে যেখানে সব ধর্মকে সমানভাবে বিবেচনা করার কথা,” বলছেন ইতিহাসবিদ সোহেল হাশমি।


কিন্তু ডিডিএ-র কর্মকর্তা মি. তিওয়ারি বলেন, 'পুরোপুরি আইনি' পদক্ষেপকে অহেতুক ধর্মীয় রং দেওয়া হচ্ছে।


তিনি আরও বলেন যে ডিডিএ প্রায়শই মন্দির সহ সরকারি জমিতে জবরদখল হটানোর কাজ করে এবং মসজিদ যেদিন ভাঙ্গা হয়েছে সেই একই দিনে অন্য এলাকায় পাঁচটি মন্দিরও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।


"আমরা শুধু আমাদের কাজ করছি," তিনি বলেন।

মসজিদের ইমাম জাকির হুসেন


‘আগে থেকে ঘোষণা করা হয় নি’

মসজিদের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা বলছেন, মসজিদটি ভাঙা হবে, এমন কোনও ঘোষণা আগে থেকে করা হয় নি। ভাঙ্গা শুরুর সময়ে তাই বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।


বিবিসি নয়জন শিশুর সঙ্গে কথা বলেছে, যারা জানিয়েছে, ভোর ৫টায় তারা যখন সকালের নামাজের জন্য ঘুম থেকে উঠেছিল, তখনই তারা বিকট শব্দ শুনতে পায়।


তাদেরই একজন ওমরের মনে আছে, কয়েক ডজন পুলিশ, কয়েকটি বুলডোজার এবং "কিছু রাগী চেহারার লোক চিৎকার করে আমাদের বাইরে আসতে বলছিল।“


এমন সময় ইমাম সাহেব ছুটে এলেন। 'দৌড়াও, পালাও' বলে চিৎকার করে ওঠেন তিনি।


"যা পাও নিয়ে দৌড়াও," শিশুদের উদ্দেশ্যে বলেন তিনি।


ওমর দৌড়িয়েছিল শুধু একটা সোয়েটার আর চপ্পল হাতে। তার বন্ধু মুরীদ সেটাও করতে না পেরে খালি পায়ে পালিয়ে যায়। আরও পাঁচটি শিশু, যাদের বয়স ১০ বছর, তারাও কোনও শীতের পোষাক বা জুতো পড়ার সময় পায় নি।


একটি শিশু, জাফরের কথায়, "আমার ভাগ্য ভাল, অন্তত খাবারের থালাটি নিয়ে আসতে পেরেছি। আর আমার প্রিয় ব্যাটটা।


শুধু যে শিশুরাই বিধ্বস্ত তা নয়। মিঃ হুসেন, যিনি তার পরিবারের সঙ্গেই মসজিদের পাশে একটি ছোট বাড়িতে থাকতেন, তিনিও গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।


তিনি এখনও প্রতিদিন ওই জায়গাটি দেখতে যান। কিন্তু বেশি কাছাকাছি গেলে পুলিশ কর্মীরা তাকে থামিয়ে দেয়।


মাদ্রাসায় ইংরেজি ও হিন্দির শিক্ষক মুজাম্মিল সালমানি বলছিলেন, তার চাচাকে মসজিদের পাশের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল। বুলডোজার দিয়ে সেটাও ভেঙ্গে দেওয়ার পরে তারা শুধু তার কবরের কিছু ভাঙা পাথরের টুকরো খুঁজে পান।

মসজিদ, কবরস্তান আর সুফি সন্তের মাজার - সবই ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে


বাহাদুর শাহ জাফরের ইতিহাস জড়িত


মসজিদটির ইতিহাস সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না - কেউ কেউ বলেন যে এটি ত্রয়োদশ শতকে রাজিয়া সুলতানা নির্মাণ করেছিলেন, যাকে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নারী মুসলিম শাসক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।


আবার কেউ কেউ বলছেন, এর বয়স আরও বেশি হতে পারে। মি. হাশমি বলেন, কাঠামোটিতে ধূসর পাথরের ব্যবহার এই ইঙ্গিত দেয় যে এটি প্রায় ৬০০-৭০০ বছর আগে সুলতানি আমলে নির্মিত।


আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার (এএসআই) নথি থেকে জানা যায়, ১৮৫৩ সাল নাগাদ শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের আমলে মসজিদটির সংস্কার করা হয়।


ঐতিহাসিক রানা সাফভির কথায়, মসজিদটিতে সম্রাটের নিজের লেখা একটি শিলালিপিও ছিল।


বেশিরভাগ কাঠামোর সংস্কার করা হলেও, মিজ সাফভি বলেন যে মসজিদটি এখনও ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন, যা সংরক্ষণ করা উচিত ছিল।


“সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, যে মসজিদটির সঙ্গে শেষ মুঘল সম্রাটের ইতিহাস জড়িয়ে আছে, সেটা কী করে গুরুত্বহীন হয়ে গেল?” প্রশ্ন রানা সাফভির।


যদিও ডিডিএ বলছে, মসজিদের ইতিহাস সম্পর্কে তাদের কাছে কোনও নথি নেই।


মি. তিওয়ারি বলেন, "ভবনটি ভেঙ্গে দেওয়ার পরে আমরা জানতে পেরেছি যে ঐতিহাসিকরা এরকম দাবি করছেন,"


তার কথায়, "ভবনটিকে বেশ আধুনিকই দেখাচ্ছিল, মোটেও অত পুরনো ছিল না। আমরা জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে ঘোষিত স্মৃতিসৌধগুলি সংরক্ষণ করি, তবে এই ভবনটি নিয়ে এরকম কোনও রেকর্ড নেই।“


উসামা, যিনি একটাই নাম ব্যবহার করেন, তিনি একজন স্থপতি। অবসর সময়ে মেহরৌলি এলাকার ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেন মি. উসামা।


তার মনে আছে তিনি মসজিদে শিশুদের সঙ্গে নানা উৎসব উদযাপন করতেন। সারা দেশ থেকে অনেকে মসজিদে নামাজ পড়তে আসতেন, তাদের সঙ্গেও গল্প হত মি. উসামার।


"যদিও এটি জঙ্গলের ভেতরে ছিল, তবে জায়গাটি একটি সামাজিক কেন্দ্র হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখানে সব ধরনের মানুষই আসতেন।


‘ধর্মীয় কমিটির অনুমোদন’


ক্রমবর্ধমান নগরায়ন নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকায় ১৯৯০-এর দশকে দিল্লি শহরের শেষ সবুজ বনাঞ্চল হিসাবে ‘সঞ্জয় বন’ সংরক্ষিত অরণ্যের মর্যাদা পায়।


সম্প্রতি ডিডিএ ওই এলাকায় জবরদখল বিরোধী তৎপরতা শুরু করেছে।


তবে ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করেছেন যে বনটি সংরক্ষিত অরণ্যের মর্যাদা পাওয়ার অনেক আগে থেকেই মসজিদটির অস্তিত্ব ছিল তাই এটিকে জবরদখল হিসাবে বিবেচনা করা যায় না।


তাঁদের আশঙ্কা, এই ধরনের পদক্ষেপ মেহরৌলির অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনাকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।


সোহেল হাশমি বলেন, “বনাঞ্চল যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে বনাঞ্চল আর তার ভেতরে থাকা ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলির মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব হওয়া উচিত নয়। দুটোই সংরক্ষণ করা দরকার।".


দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা ডিডিএ ২০২৩ সালে হাইকোর্টে তাদের বক্তব্য জানাতে গিয়ে বলেছিল যে তারা মেহরৌলিতে দিল্লি ওয়াকফ বোর্ডের মালিকানাধীন মসজিদ, কবর এবং অন্যান্য বৈধ সম্পত্তি ভাঙবে না কারণ সেগুলির ধর্মীয় তাৎপর্য আছে।


গত সপ্তাহে ডিডিএ জানায়, মসজিদ ভাঙার ব্যাপারে একটি ধর্মীয় কমিটি 'অনুমোদন দিয়েছিল’।


মসজিদ কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে আদালতে অভিযোগ করেছে যে ডিডিএ কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। ওই রায়ে ডিডিএকে বলা হয়েছিল যে ওই এলাকায় যে কোনওরকম ভাঙ্গাভাঙ্গি করার আগে ওয়াকফের মালিকানাধীন জমিগুলি চিহ্নিত করতে।


এই সব বিতর্ক থেকে দূরে, ফাওয়াদ অন্য একটি মসজিদে তার নতুন আশ্রয়স্থলের উঠোনে বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলছিল।


নতুন জায়গাটা যে তার খুব অপছন্দের, তা নয়। তবে নতুন জায়গাতে সবুজ গাছপা

লা কম।


তাই “হয়ত প্রিয় রঙ হিসাবে আমাকে অন্য একটা রঙ খুঁজে নিতে হবে,” বলছিল ফাওয়াদ।


পরিচয় গোপন রাখতে শিশুদের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে


নামাজিদের লাথি মেরে সাসপেন্ড দিল্লির এক পুলিশ

নামাজিদের লাথি মেরে সাসপেন্ড দিল্লির এক পুলিশ

৯ মার্চ ২০২৪

Video link : Click Here


দিল্লির ইন্দ্রলোক এলাকায় নামাজিদের লাথি মারা ঘটনায় পুলিশের এক সাব-ইন্সপেক্টরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। শুক্রবারের ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।

ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তায় অনেকে একসঙ্গে নামাজ পড়ছিলেন। তারা যখন সিজদা করছেন, তখনই এক পুলিশ কর্মী নামাজিদের লাথি মেরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

মুহূর্তেই ঘটনাস্থলে হাজির অনেক নামাজি ওই পুলিশ কর্মীকে ঘিরে ধরে তার সঙ্গে তর্ক করতে শুরু করেন।

সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা ওই ঘটনার নিন্দা করছেন এবং দোষী পুলিশ কর্মীর কঠোর শাস্তির দাবি তুলছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই এলাকার মেট্রো রেল স্টেশনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন স্থানীয় মানুষরা।

কী বলছে পুলিশ?


দিল্লি পুলিশ ওই ঘটনার জন্য দায়ী সাব-ইন্সপেক্টর মনোজ তোমারকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত, অর্থাৎ সাসপেন্ড করেছে।

দিল্লি পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

উত্তর দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার মিনা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, "একটি ভিডিওটি প্রকাশ্যে এসেছে। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটিতে যে পুলিশ কর্মীকে দেখা গেছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বে ছিলেন যে পুলিশ কর্মী, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

“শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হয়েছে। স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সবার কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছি যে, এলাকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে,” জানিয়েছেন মি. মিনা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা


ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক ব্যক্তি বলেন, "দিল্লি পুলিশ এটা খুবই খারাপ করেছে। তারা নামাজিদের মারল! এখানে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।“

"যে পুলিশ কর্মী এই কাজ করেছে, তাকে সাসপেন্ড না করে চিরতরে বরখাস্ত করা উচিত। যদি তা না করা হয়, তাহলে অন্য পুলিশ সদস্যরাও একই কাজ করতে পারেন,” বলছিলেন ঘটনাস্থলে হাজির এক যুবক।

এই ঘটনার পর কংগ্রেসের রাজ্যসভার সংসদ সদস্য ইমরান প্রতাপগঢ়ি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লেখেন, "নামাজ পড়ার সময় এক ব্যক্তিকে লাথি মারছিলেন দিল্লি পুলিশের যে সদস্য, তার সম্ভবত মানবিকতা নিয়ে কোনও ধারণাই নেই।

“নিজের মনে এ কোন ঘৃণা পুষে রেখেছেন তিনি! দিল্লি পুলিশকে অনুরোধ ওই পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ধারায় মামলা দায়ের করা হোক এবং তাঁর চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হোক,” লিখেছেন মি. প্রতাপগঢ়ি।

কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাতে তার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “অমিত শাহের দিল্লি পুলিশের একটি নীতিবাক্য রয়েছে শান্তি, সেবা, ন্যায়। পূর্ণ নিষ্ঠা সহকারে পালন করছে তারা।
মিস্টার হক নামে এক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী কাওঁরিয়াদের (যারা কাঁধে করে হিন্দুদের ভগবানের মাথায় ঢালার জন্য পবিত্র জল বয়ে নিয়ে যায় পায়ে হেঁটে, মিছিল করে) ওপরে পুলিশ সদস্যদের ফুল বর্ষণের একটি ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, "দুটো ভারত। দিল্লির ইন্দ্রলোকে নামাজিদের লাথি মারছে দিল্লি পুলিশ। আর রাস্তায় কাওঁরিয়াদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানায় তারা।“

জিনেল অ্যান গালা নামে আরেকজন লিখেছেন, “দিল্লির রাস্তায় নির্লজ্জ কর্তৃত্ববাদ। দিল্লি পুলিশ এত অসংবেদনশীল কেন? মুসলমানদের সঙ্গে তারা যে আচরণ করে, তা কি অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে করবে?”

অশোক কুমার পাণ্ডে নমাজ পড়ার সময় ওই যুবককে লাথি মারার একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন।

তিনি লিখেছেন, "আমি কিছুক্ষণের জন্য হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এমন হীন আচরণ আশা করি নি। আমি ভাবছি যখন এই ভিডিওটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে তখন আমার দেশের কী ভাবমূর্তি তৈরি হবে। লজ্জাজনক, লজ্জাজনক।

প্রকাশ্যে নামাজ পড়া নিয়ে আগেও বিতর্ক


শুক্রবারের ঘটনার পরে এলাকার মেট্রো রেল স্টেশনের সামনে বিক্ষোভ

বেশ কিছুদিন ধরেই রাস্তায় নামাজ পড়া নিয়ে বিতর্কের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

দিল্লি লাগোয়া গুরুগ্রামে (আগেকার গুরগাঁও) রাস্তায় নামাজের বিরোধিতাকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।

গত বছর প্রকাশ্যে নামাজ পড়া নিয়ে বিবাদের জেরে হরিয়ানার গুরুগ্রামে একটি মসজিদে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলে ২৬ বছর বয়সী এক ইমাম নিহত হন।

এরপর দক্ষিণ হরিয়ানায় শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়।

ওই গুরুগ্রামেই খোলা জায়গায় নামাজ পড়া নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। আলোচনার পর মুসলমান গোষ্ঠীগুলি খোলা জায়গায় নামাজ পড়ার স্থানের সংখ্যা ১০৮ থেকে কমিয়ে ৩৭-এ নামিয়ে আনতে সম্মত হয়।

রাজনৈতিক ইসলামের গবেষক হিলাল আহমেদ বিবিসিকে বলেন, “কিছু উগ্র গোষ্ঠী ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানোর জন্য একটি নাগরিক সমস্যাকে ব্যবহার করছে। তারা নামাজিদের বলছে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে। তবে সমস্যাটা হচ্ছে পর্যাপ্ত মসজিদই তো নেই।“

তিনি বলেন, “গুরুগ্রামে মাত্র ১৩টি মসজিদ রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র একটি রয়েছে শহরের নতুন গড়ে ওঠা এলাকায়। শহরের বেশিরভাগ অভিবাসী শ্রমিক ওখানেই বাস করে, সেখানেই তাদের কাজ।

ওয়াকফ বোর্ডের স্থানীয় সদস্য জামালউদ্দিন বলেন, “বোর্ডের বেশিরভাগ জমি শহরের উপকণ্ঠে যেখানে মুসলমানদের জনসংখ্যা খুব কম। ওইসব এলাকায় পর্যাপ্ত নামাজি না থাকায় ১৯টি মসজিদ বন্ধ করে দিতে হয়েছে।“

তাঁর মতে, গুরুগ্রামের ব্যয়বহুল এলাকায় জমি কেনার মতো পর্যাপ্ত টাকা বোর্ডের হাতে নেই।

গাজায় ‘নৃশংসতা’ বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি সৌদি বাদশাহর আহ্বান

গাজায় ‘নৃশংসতা’ বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি সৌদি বাদশাহর আহ্বান

সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজফাইল ছবি: রয়টার্স

ফিলিস্তিনের গাজায় ‘নৃশংস অপরাধ’ বন্ধ এবং ‘নিরাপদ মানবিক করিডরের ব্যবস্থা’ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিজেদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি হামলার মধ্যে দেশটির নাম উল্লেখ না করে রোববার এক লিখিত বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

বাদশাহর পক্ষে লিখিত বক্তব্যটি পাঠ করেন তথ্যমন্ত্রী সালমান আল-দোসারি। সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে সোমবার থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়া উপলক্ষে এই বক্তব্য দেন সালমান বিন আবদুল আজিজ।
সৌদি বাদশাহ আরও বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য বেদনাদায়ক যে ফিলিস্তিনে আমাদের ভাইয়েরা যখন হামলার শিকার হচ্ছেন, তখন এ বছর রমজান মাস এসেছে।’

এবারের রমজানে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার চিত্রটা ভিন্ন হতে যাচ্ছে। এমন এক পরিস্থিতিতে উপত্যকাটির বাসিন্দারা রমজানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যখন সেখানে নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।

গাজায় পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলছে ইসরায়েলের হামলা। উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় সেখানে অন্তত ৩১ হাজার ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। আহত হয়েছেন ৭২ হাজার ৬৫৪ জন। এর মধ্যে আগের ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন ৮৫ জন।
শুধু রক্তক্ষয়ই নয়, রমজানের আগমুহূর্তে ক্ষুধাও বিপর্যস্ত করেছে গাজাবাসীকে। গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর থেকে উপত্যকাটিতে অনাহারে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, উত্তর গাজার অবস্থা মর্মান্তিক। বারবার আহ্বান জানানোর পরও সেখানে সড়কপথে ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে না। আর রমজান যখন এগিয়ে আসছে, তখন প্রাণহানিও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে গাজা পৌর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলমান সংঘাতের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের হামলায় এক হাজারের বেশি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে।

রমজানের আগে গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে একটি বার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, ‘গাজায় যাঁরা ভয়াবহ দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি সংহতি ও সমর্থন জানাচ্ছি আমি। এ কঠিন সময়ে রমজান আমাদের আশার আলো দেখাবে।’


সৌদি আরামকো ও অ্যাডনক এবার নজর ফেরাচ্ছে লিথিয়ামের দিকে

সৌদি আরামকো ও অ্যাডনক এবার নজর ফেরাচ্ছে লিথিয়ামের দিকে

Soudi Arab 

সৌদি আরবের শায়বাহে অবস্থিত আরামকোর তেলক্ষেত্রের দৃশ্য ছবি: রয়টার্স।

অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার অংশ হিসেবে এবার লিথিয়াম উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে উপসাগরীয় দুই শীর্ষ তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো ও অ্যাডনক। এ পদক্ষেপ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে তেল কোম্পানিগুলোর নতুন বিনিয়োগের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ব্যাটারি তৈরিতে লিথিয়াম ব্যবহার হয়।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, মূলত তেলের খনিতে থাকা লবণাক্ত পানি বা ব্রাইন থেকে লিথিয়াম আলাদা করার উদ্যোগ নিচ্ছে কোম্পানি দুটি। বর্তমানে বৈদ্যুতিক যানবাহনের (ইভি) চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান এ চাহিদাকে পুঁজি করে ব্যবসা করার জন্য তারা লিথিয়াম উৎপাদনের চিন্তা করেছে।  

বিশ্বের দেশগুলো পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে চায়। এ কারণে তেল কোম্পানিগুলো ব্রাইন থেকে লিথিয়াম আলাদা করতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের চিন্তা করছে। এ তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সনমবিল এবং অক্সিডেন্টাল পেট্রোলিয়ামের মতো কোম্পানিও।

গত কয়েক দশক ধরে সৌদি আরবের অর্থনীতি তেলের ওপর নির্ভর করে চলছে। তবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বিকল্প সম্পদ খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেন। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেশটিকে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির কেন্দ্র হিসেবে পরিণত করতে চান তিনি। এ জন্য শত শত কোটি ডলারও ব্যয় করছেন মোহাম্মদ বিন সালমান।
বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, সৌদি আরামকো ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি বা অ্যাডনক এত দিন লিথিয়াম নিষ্কাশনসংক্রান্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনার খুব প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। তবে বর্তমানে লিথিয়ামকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ মনে করা হয়। সে জন্য এই খনিজটি উৎপাদনে আরও মনযোগ বাড়াচ্ছে দেশ দুটি।

তবে লিথিয়াম নিষ্কাশন প্রযুক্তির ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করেছেন তাঁরা। অন্যদিকে সৌদি আরামকো এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। অ্যাডনকও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বর্তমানে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে দেশ দুটি চাইলে এ খাতে দক্ষতা অর্জন করতে পারে। সাধারণত উন্মুক্ত পিট মাইন থেকে লিথিয়াম আহরণ অনেক ব্যয়বহুল ও পরিবেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং। তবে লোনা জল থেকে লিথিয়াম নিষ্কাশন করার ক্ষেত্রে তেমন অসুবিধা নেই।
বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির জন্য বিশ্বে লিথিয়ামের ব্যবহার বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে লিথিয়ামের বড় প্রক্রিয়াজাতকারী ও ভোক্তা দেশ হচ্ছে চীন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে বিশ্বজুড়ে নতুন যানবাহন কেনা কমেছে। তাই গাড়ির চাহিদা কমায় লিথিয়ামের দামও কমেছে। ২০২২ সালের নভেম্বরে বিশ্ববাজারে লিথিয়ামের দাম সর্বোচ্চ হয়েছিল। এর পর থেকে খনিজ পদার্থটির দাম প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। তবে শীর্ষ গাড়ি নির্মাতারা ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা চিন্তা করে লিথিয়াম মজুত করে রাখছে।

বিশ্লেষকেরা বলেছেন, আগামী বছরগুলোতে ইভি শিল্প লিথিয়ামের ওপর নির্ভর করবে। তবে ব্রাইন থেকে লিথিয়াম আহরণের একটি সমস্যা হলো এই প্রক্রিয়ায় লিথিয়ামের ঘনত্বের মাত্রা কম হতে পারে। তবে দুটি সূত্র জানিয়েছে, আরামকো ও অ্যাডনক লিথিয়াম পরিস্রাবণে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহ দেখিয়েছে।

এরই মধ্যে সৌদি আরব নিজস্ব ইভি ব্র্যান্ড সিআর প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশটি ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক ৫ লাখ ইভি উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে সৌদি আরবের কোম্পানি ম্যাডেন সমুদ্রের পানি থেকে লিথিয়াম আহরণের কাজ করছে।
গত ডিসেম্বরে সৌদি শিল্প ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপমন্ত্রী খালিদ বিন সালেহ আল-মুদাইফার রয়টার্সকে জানান, তেলক্ষেত্র থেকে লিথিয়াম নিষ্কাষণের বিষয়ে ম্যাডেন ও আরামকো মিলেমিশে গবেষণাকাজ চালাচ্ছে।

আল-মুদাইফার বলেন, কোম্পানি দুটো ভালোভাবে সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও লিথিয়াম নিষ্কাশনের কাজ করছে। যদিও এর জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে; তবে এখানে ভালো বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।